Translate

Monday, August 29, 2016

Transgender Heart, Story of Unimaginable Pain. হিজড়ার অন্তর, অকল্পনীয় বেদনার গল্প

হিজড়া... নাম শুনলেই অনেকের আতঙ্ক, অথচ যাদের বেদনার গল্পগুলো আমরা বুঝতে অক্ষম। যখন ১০ বছরের এক  সুন্দর শিশু বুঝতে পারে যে সে এক আজব সৃষ্টি, স্বাভাবিকতার বাইরে এক দুর্লঙ্ঘনীয় অস্পৃশ্য বেদনার সত্ত্বা, যাকে নিয়ে সুখী না তার নিজ জন্মদাত্রী মা, তার আদরের পরিবার, তার সন্মানিত বাবা, যাকে সমাজের কোন স্তরে ঠাই দেবার মত কোন অবস্থা নেই, তখন সেই শিশুর অন্তরের অবস্থা কি হতে পারে ? তার এতদিনের চির পরিচিত সব মানুষগুলো যখন বুঝতে পারে তার অস্বাভাবিকতা তখন সবার নিজেদের অজান্তেই  সেই নিস্পাপ শিশুর সাথে তৈরি হয়ে যায় এক মানসিক দূরত্ব যা তাকে ঠেলে দেয় চিরদুঃখী অবহেলিত, পৃথিবীর সমস্ত সু্খ, আনন্দ, ভালবাসা বঞ্চিত এক অসহায় জীবনের দিকে। কোন মানুষ তাকে আপন করে না, আপন খেলার সাথীরা হয়ে যায় বহু দুরের,কেমন যেন অজানা, অচেনা। কোন মানুষ আর তার দিকে স্বাভাবিকভাবে তাকায় না, এতদিনের সুন্দর আদরের শিশুটাই হয়ে ওঠে সবার কাছে অস্পৃশ্য।তাদেরকে নিজেদের সামাজিকতার বাইরে ঠেলে ফেলে দেয় তুচ্ছ তাচ্ছিল্য আর বন্ধু বান্ধবহীন এক অসামাজিকতার দিকে। ভুলে যায় যে সেও তো একজন মানুষ, তারও মন বলে এক বস্তু আছে, তারও আছে এক স্নেহ-ভালবাসার আকাঙ্ক্ষী এক তৃষ্ণার্ত অন্তর। তারও মন চায় আর বাকি সাধারন মানুষগুলোর মত বাচতে, তারও তো মন চায় সুন্দর এক পরিবারের সপ্ন দেখতে, তারও তো মন চায় ফুলের মত কোন নিস্পাপ কোমল শিশুর গর্বিত বাবা বা স্নেহের মা হতে। কিন্ত তাদের সেই অতৃপ্ত কামনা অসম্ভবের কঠিন দেয়ালের আড়ালেই থেকে যায়, যে সপ্ন কখনও বাস্তব হবার নয়, অথচ তাকে মেনে নেয়াও এক ভয়াবহ যন্ত্রণা। আর তার সেই দুঃসহ বেদনাকে আরও কঠিন করে তোলে তার আশেপাশের মানুষগুলো, যারা বুঝতে পারে না তাদের হাসির আড়ালে লুকিয়ে রাখা বেদনায় দুমরে মুচরে যাওয়া রক্তাক্ত, বাথিত অন্তর। না আছে পরাড়ালেখার স্বাভাবিক সুযোগ, না বিয়ে, না চাকুরী, না বাবসা। না আছে একটু সহানুভুতি আর না আছে কোন সন্মান, যেন ওরা কোন মানুষই না।

আমার ফ্রেন্ডলিস্ট এ এরকম একজন আছে, নাম অবশ্যই বলব না, যার সাথে আমার মাঝে মাঝে কথা হয়। আমার কোন পোস্ট এ ও কমেন্ট করলেই আমি আতঙ্কিত হয়ে যাই। না...   হিংস্রতার ভয়ে না, বরং ওর না পাওয়ার বেদনার প্রভাবে, ওর অক্ষম ক্রোধ আর মানুষের অবহেলা, নিচতা আর হিংস্রতার প্রতিবাদে ও যেসব কথা বলে, যেসব প্রশ্ন করে, আসলে সেগুলোর কোন যুক্তি সঙ্গত উত্তর দিতে আমি অক্ষম হয়ে যাই, এজন্য কষ্ট লাগে এই মানুষটার জন্য। অথচ ও অনেক শিক্ষিত, মার্জিত, যুক্তিবোধ প্রখর, কিন্ত অন্তর ব্যথিত, আর তার মন চির অশান্ত। ওর সাথে কিছুক্ষণ কথা বললেই ওর বেদনার ছোঁয়া এত মারাত্মক যে, তার ছোঁয়া সহ্য করা অসম্ভব। আমি বিস্মিত হয়ে ভাবি যে, আমি শুনেই সহ্য করতে পারি না, আর ওরা কিভাবে সহ্য করে এই ভয়াবহ মানসিক কষ্ট, অথচ এর থেকে পরিত্রান পাবারও কোন পথ নেই। এটা নিঃসন্দেহ যে, ফ্রেন্ড লিস্ট এর সব ফ্রেন্ডদেড় চাইতে এই মানুষটার প্রতি সবচাইতে বেশী মায়া এবং সহানুভুতি পোষণ করি তার কষ্টের জীবনের জন্য।

আমি এতদিন হিজড়াদেড় কাজ দেখতাম আর মনে মনে ভাবতাম যে , এদের জন্য কেউ কিছু করে না কেন আর ওঁদের কেন বেহুদা মারামারি করে? আর ওরা তো খাবার আর মৌলিক চাহিদার প্রয়োজনেই বাধ্য হয়ে মানুষের কাছে যায়, আর যখন মানুষ নিজের স্বজাতির এক অভাবি সম্প্রদায়কে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে, তখন তারা বাচার তাগিদেই হিংস্র হয়ে ওঠে। অথচ এটা ওদের দোষ না। আমার উত্তরার বাসায় একদিন ওদের এক বাহিনী ঢুকেছিল । আমি বাসায় না থাকাতে বাসার সবাই আতঙ্কে অস্থির হয়ে ছিল। অথচ আমি বাসায় গিয়ে যখন ওঁদেরকে সুন্দর ভাবে আপ্যায়ন করলাম, তখন দেখলাম যে, ওরাও অনেক অনেক নাইস মানুষ একেকজন। এক মহিলা লাইক হিজড়া, যে ওদের নেত্রি ছিল, সে আমাকে আবার কয়েকটা সুন্দর সুন্দর হাদিসও শোনাল । ওরা যেদিন আমার ঢাকার বাসায় এসেছিল , সেদিন ওদের সাথে অনেকক্ষণ কথা বলেছি। ওদের মধ্যে একজন ছিল বরিশালের। বিশ্বাস করবে না যে, ওরা কত ভাল। দেখলাম যে, ওদের সাথে সুন্দর ব্যাবহার করলে ওরা কত সুন্দর। এরপর থেকে ওরা প্রায়ই আমার অফিসে আসত। দেখলেই সালাম দিত, কখনও টাকা না দিলেও কিছু বলত না। কত নাইস। সুন্দর ব্যাবহারে কি হয় সেদিন আমি বুঝেছি। অথচ ওরা আমার বাসায় আসার আগেই আমাদের বাসার সাম্নের বাসার এক মেজর সাহেবকে ওরা ওদের কাছে মাফ চাইতে বাধ্য করে পুরা বাহিনী সহ আমার বাসায় হানা দেয়। সেই মেজর সাহেব প্রথমে ওদের ২ জনের সাথে খারাপ ব্যাবহার করেছিল। পরে ওরা প্রায় ৩০/৪০ জনের বাহিনী মেজর সাহেবের বাসায় হানা দেয়। এমনকি মেজর সাহেব পুলিশ এনেও কাজ হয় নি। আর আমার বাসায় এসে প্রথমে ওরা অনেক গোলমাল করতে চেয়েছিল। কিন্ত আমি এসে যেই ওদেরকে সুন্দর ভাবে সালাম দিয়ে আমার বাসার ড্রয়িং রুমে এনে ওদেরকে বসালাম, আপ্যায়ন করলাম, তখন দেখলাম যে ওরা কত ভদ্র এবং কত সামাজিক আচরন করতে পারে সুন্দর পরিবেশ পেলে।   আমার আম্মাকে মা বলে কত সন্মান, কত সুন্দর। কেনই বা মানুষ ওদের জন্য কিছু করে না আর কেনই বা ওঁদেরকে বেহুদা হিংস্র হতে হবে ?? কি হয় যদি আমরা সবাই একটু সামান্ন কিছু করি ওদের জন্য। সংখ্যার অনুপাতে তো ওরা খুবই সামান্য । এবং ওদের সবচাইতে বড় সমস্যা হল পরালেখা না জানা, ফলে কিছুই করতে পারে না, যার কারনে আর্থিক সমস্যা থেকেই তারা যত অন্নায় কাজ করতে বাধ্য হয়। তাই আমরা সবাই একটু একটু করে সাহায্য করলেও তো ওদের জন্য তা যথেষ্ট হয় যায়। আল্লহ তায়ালা কিয়ামতের দিন ধনিদেরকে এই বলে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন যে, আমি পৃথিবীতে তোমাদেরকে এজন্য সম্পদ দান করেছিলাম যে, আমার অভাবী বান্দাদের কষ্টের আর্তনাদ যেন আমার আরশে না পৌছায় , অথচ তোমরা নিজেরা ভরাপেটে খেয়ে আরামে ঘুমিয়েছিলা আর তারা না খেয়ে ছিল। কেন ? কাজেই আমাদের সবারই এই সমান্ন সময়ের পৃথিবীতে মানুষের জন্য কিছু কাজ করা উচিত, জেগুলো আসলে আমাদেরি কাজে লাগবে একদিন। আর সেই দিন হবে এমন এক দিন, যেদিন পিতা তার পুত্রের কোন উপকার করতে পারবে না বা পুত্রও সক্ষম হবে না পিতার কোন উপকার করতে, যদি না পাথেয় হিসেবে কিছু ভাল কাজ থাকে। আল্লহ তায়ালা বলেন যে, তোমাদের প্রত্যেকেরই চিন্তা করা উচিত যে সে আগামী দিনের জন্য কি প্রেরন করেছে ?

No comments:

Post a Comment